মহারাষ্ট্রে চিতাবাঘে ১৭ মৃত্যু, কর্ণাটকে বাঘটে আতঙ্ক—গ্রামে লোহার কাঁটার কলার, সাফারি বন্ধ, পর্যটনে ধাক্কা
ভারতে চিতাবাঘ–বাঘের ত্রাস: দুই রাজ্যে মানুষের বাঁচতে ‘অদ্ভুত কাণ্ড’
- আপডেট সময় ০২:১৭:১৭ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৭ নভেম্বর ২০২৫
- / ৫ বার পড়া হয়েছে
রাতের ঘন অন্ধকারে আখক্ষেতের আল ধরে হাঁটছিল এক কিশোর। হঠাৎই ক্ষেতের গভীর থেকে শোনা যায় অদ্ভুত শব্দ, এরপর অন্ধকার ছিঁড়ে ছায়ার মতো ঝাঁপিয়ে পড়ে এক হিংস্র প্রাণী। গ্রামবাসী ছুটে এলেও তখন সব শেষ। মহারাষ্ট্রের পুনের পিম্পারখেড এলাকার এই ঘটনাটি এখন আশপাশের পুরো অঞ্চলের মানুষের মনে আতঙ্ক তৈরি করেছে।
গত কয়েক মাস ধরে এই অঞ্চলে চিতাবাঘের মুখোমুখি হওয়া নিত্যদিনের ঘটনায় পরিণত হয়েছে। ঘন আখক্ষেত চিতাবাঘের লুকানোর আদর্শ জায়গা হয়ে উঠেছে। শুধু চলতি বছরেই ৯ জনসহ গত পাঁচ বছরে অন্তত ১৭ জনের মৃত্যু ঘটেছে চিতাবাঘের আক্রমণে।
বিশেষ করে ৩ নভেম্বর ১৩ বছর বয়সী এক শিশুর মৃত্যু স্থানীয়দের ক্ষোভ আরও বাড়িয়ে দেয়। তারা আশপাশের সব রাস্তা অবরোধ করে নিরাপত্তা বৃদ্ধির দাবি জানিয়েছে।
গ্রামে এখন লোহার কাঁটার ‘কলার’
বিপজ্জনক পরিস্থিতিতে গ্রামবাসীদের জন্য বন দপ্তর দিয়েছে এক ব্যতিক্রমী নিরাপত্তা সরঞ্জাম—লোহার কাঁটা লাগানো বিশেষ কলার, যা গলায় পড়ে মাঠে কাজ করছেন কৃষকরা।
এছাড়া বসানো হয়েছে এআই নির্ভর স্বয়ংক্রিয় ক্যামেরা, যা চিতাবাঘের গতিবিধি শনাক্ত করতে সক্ষম। ইতোমধ্যে ২৩৩টি গ্রামকে অতি সংবেদনশীল এলাকা ঘোষণা করা হয়েছে।
দক্ষিণে আরও ভয়াবহ পরিস্থিতি, বন্ধ সাফারি
এদিকে ভারতের দক্ষিণাঞ্চলীয় কর্ণাটকের সর্গুর ও এইচডি কোটে এলাকায় বাঘের আক্রমণে মারা গেছে ৩ জন।
ঘটনার পরই ব্যান্ডিপুর ও নাগরহোল টাইগার রিজার্ভে সব সাফারি বন্ধ ঘোষণা করেছে সরকার।
সাফারি বন্ধ হওয়ায় বড় ধাক্কায় পড়েছে স্থানীয় পর্যটন খাত—গাইড, ড্রাইভার, রিসোর্ট ও হোমস্টে মালিকরা।
আক্রমণকারী দুটি বাঘকে আলাদা করে বন্দিও করা হয়েছে।
মানুষ–বন্যপ্রাণীর সংঘাত বাড়ছে
বিশেষজ্ঞরা বলছেন—বনাঞ্চলে মানুষের অনুপ্রবেশ বৃদ্ধি, কৃষিজমি সম্প্রসারণ ও প্রাণীর প্রাকৃতিক বাসস্থানের সঙ্কুচিত হওয়ার কারণে সংঘাত বাড়ছে।
তাদের পরামর্শ—
-
বনের ধারে একা না যাওয়া
-
নির্দেশিকা কঠোরভাবে মেনে চলা
-
বিপদের মুখোমুখি হলে দৌড় না দিয়ে স্থির থাকা
উত্তর–দক্ষিণ দুই রাজ্যেই ত্রাসের রাজত্ব
সব মিলিয়ে মহারাষ্ট্রের পুনে ও কর্ণাটকের ব্যান্ডিপুর–নাগরহোল—দুটি ভিন্ন অঞ্চল হলেও এখন একই আতঙ্কে কাঁপছে।
এখানকার মানুষের প্রতিটি দিন কাটছে ভয়, সতর্কতা ও বাঁচার সংগ্রামের মাঝেই—যেখানে মানুষের অস্তিত্ব রক্ষার লড়াই প্রকৃতির সঙ্গে নতুন টানাপড়েনে দাঁড়িয়েছে।





















